রিকশা চালিয়ে সারা দিন যা আয় করেন তা গরিব শিশুদের বিতরণ করে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মাইনসে আমারে পাগল কয়। কেউ কয়, আমি নাকি কাম থইয়া অকাম করি। আমি এইতা হুন্যাও হুনি না। নিজে লেখাপড়া করতাছি না, এইডাই আমার পাগলামী। আমার মতো যারা গরিব, তারারে আমি সাহস দেই। আর কিছু না। ফাঁক পাইলেই স্কুলে স্কুলে ঘুরি। লেখাপড়ার জোগাল কিন্যা লইয়া যাই।

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার চক লেংগুড়া গ্রামের রিকশাচালক তারা মিয়া রিকশা চালিয়ে সারা দিন যা আয় করেন, তার কিছু অংশ জমা করেন। একসঙ্গে বেশি টাকা জমা হলে সেই টাকায় শিক্ষা উপকরণ কিনে বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে ঘুরে বিতরণ করে থাকেন তিনি। বই, খাতা, কলম, জ্যামিতি বক্স, টিফিন বক্স, ব্যাগসহ বিভিন্ন জিনিস কিনে নিজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে পৌঁছে দেন। এ পর্যন্ত ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করেছেন তিনি।

তারা মিয়া জানান, তাঁর দেওয়া জিনিসগুলো তেমন দামি না হলেও এগুলো পেয়ে বাচ্চারা খুব আনন্দ পায়। লেখাপড়ার জিনিস ছাড়াও ছেলেরা আবদার করলে মাঝেমাঝে স্কুলে খেলার জন্য বলও কিনে দেন। বেশির ভাগ সময়ই নিজের রিকশায় বসিয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে বা বিদ্যালয় থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেন। কিন্তু এমন অনেক স্কুল আছে যেখানে রিকশার রাস্তা থাকে না, হেঁটে যেতে হয়। দূরের স্কুলে যেতে অনেক সময় লাগে। ওই দিন রোজগারও বন্ধ থাকে।

রিকশাটা নিজের, তাই মহাজনের চিন্তা করতে হয় না তাঁর। সম্প্রতি ইস্ট প্ল্যান্ট ইনস্যুরেন্স কম্পানি তারা মিয়ার এ মহৎ কর্মে খুশি হয়ে তাঁকে আরো অনুপ্রাণিত করতে এক লাখ টাকা দেয়। তারা মিয়া ওই অর্থ নিজে ব্যয় না করে গরিব, প্রতিবন্ধী, অসহায় ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেন।

উপজেলার চক লেগুরা গ্রামের আবদুল হেলিমের বড় ছেলে তারা মিয়া। ছোট দুই ভাই হানিফ লরি চালায় ও সুরুজ দিনমজুর। মা ও স্ত্রীকে নিয়ে তারা মিয়া পৃথক থাকেন।

ইলুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তারা মিয়াকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেছে। এ স্কুলের শিক্ষার্থী রোজিনা আকতার জানায়, ‘তারা ভাই গরিব হয়েও আমাদের জন্য অনেক কিছু করেন। আমরা তাঁর দেওয়া উপহার যত্ন করে রাখি। উনি আমাদের ভালোভাবে লেখাপড়া করার উপদেশ দেন। উনি স্কুলে এলে সব ছেলেমেয়ে তার কাছে ছুটে যায়।

দুর্গাপুর ২ নম্বর দেবদুল গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন মিশনারি স্কুলের সভাপতি প্রদীপ মানকিন জানান, তারা মিয়া প্রায়ই স্কুলে এসে বাচ্চাদের খাতা-কলম কিনে দিয়ে যায়। সে একজন সৎ ও পরিশ্রমী মানুষ। সে আমাদের এলাকার স্কুলের শিক্ষার্থীদের উত্সাহ দেয়। নলুয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমিত কুমার গুপ্ত বলেন, ‘তারা মিয়া অনেক দিন ধরে স্কুলে এসে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ দিয়ে যায়। এটা আমাদের সবার জন্য একটি মেসেজ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর